প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার সাথে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু সংক্রামণ। বন্যা পরবর্তী সময়েও জমে থাকা পানিতে সৃষ্টি হতে পারে এডিস মশার লার্ভা। এর ফলে রয়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও। চলতি বছর এখন পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ১১ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তারমধ্য মারা গিয়েছে ৭৭ জন।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, বর্ষার বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও এখন বাড়তে শুরু করবে। এই মাস থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করতে পারে। কারণ হিসেবে তারা মনে টানা বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নেয়। ফলে বৃষ্টির মৌসুমে বাড়তে পারে ডেঙ্গু সংক্রামণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে, চলতি বছর সারাদেশে ডেঙ্গু সংক্রামণে বেশি আক্রান্ত হয়েছে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। মৃত্যুও হয়েছে এখানে বেশি। এখন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চার হাজার ৫২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজার দু’জন। এই দুই সিটি মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। সেখানে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ সিটি।
রাজধানীর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ঢাকার গোরান, খিলগাঁও, মুগদা, মান্ডা, রসুলপুর, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, দনিয়া ও পোস্তগোলা এলাকায় এডিস মশার লার্ভায় সৃষ্টিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুতে যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন, মৃত্যুও তত বাড়বে। সারাদেশে টানা বৃষ্টি ও বন্যায় জমে থাকা পানিতে সৃষ্টি হবে এডিস মশার লার্ভা। ফলে মশার উপদ্রব বাড়বে এখন। এই মুহূর্তে এডিস মশার লার্ভা ধংশ করতে না পারলে চলতি মাসেই ডেঙ্গু ভয়াবহতা বাড়তে পারে।
ডা লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, গত বছর সিটি কর্পোরেশন থেকে এডিস মশার লার্ভা ধংশ করার জন্য যে অভিযান চালানো হয়েছে, চলতি বছর সেই তৎপরতা এখনো দেখা যায়নি। ফলে ডেঙ্গু সংক্রামণ বেড়ে গেলে তা বর্তমান দেশের পরিস্থিতি যা সরকারের মোকাবেলা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে যেতে পারে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল খান বলেন, এডিশ মশার লার্ভা ধ্বংসে কীটনাশক ব্যবহারের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের বিভাগের, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার। বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে সব স্থানীয় সরকার বিভাগের সব জনপ্রতিনিধি অপসারণ করার পর নতুন প্রশাসন কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করবে তা দেখা বিষয়।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে হেলথ ইমার্জেন্সী বিভাগের ইনচার্জ ডা. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪. কমকে বলেন, এবাররে টানা বৃষ্টিতে ও বন্যায় সারাদেশের ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। এমন ঝুঁকি মাথায় রেখে আমরা সারাদেশে সকল সরকারি হাসপাতালে আলাদা করে ডেঙ্গু ওয়ার্ড তৈরি রেখেছি। ডেঙ্গু পরীক্ষা করা জন্য সিবিসি ও এনএস ওয়ান এর মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেই সাথে সকল বেসরকারি হাসপাতালেও ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।